ঈদের ছুটিতে শহরের বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতে, বিশেষ করে গ্রামের বাড়িতে ফেরে। প্রতিবার তারা পথেঘাটে বিড়ম্বনা-ভোগান্তিতে পড়ে। কিছু ভোগান্তি সওয়ার জন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু প্রায়ই সেই ভোগান্তি অনুমিত সীমা অতিক্রম করে। সড়ক-রেল-নৌপথÑসব পথে একই অবস্থা। দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। প্রতিবার ঈদের আগে-পরে এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয়Ñপরেরবার আর সমস্যা থাকবে না বলে সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়; পরিবহন মালিকরা অঙ্গীকার করেন, এরপর আর কোনো অনিয়ম হবে না। ঈদের আমেজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকারের সমাপ্তি ঘটে। সড়কপথেই বেশি চলাচল করে মানুষ, এরপর রেল ও নৌপথ। ঈদের সময়ও সড়কের ওপরই সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়ক বেহাল। ঈদ উপলক্ষে চলাচল শুরু হলে কী অবস্থা যে হবে বলা মুশকিল। সড়কমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন সড়কের অবস্থা দেখতে। কিন্তু যে অবস্থা হয়েছে, তাতে অল্প সময়ে সড়ক সংস্কার করা প্রায় অসম্ভব। ভোগান্তির আরেক নাম নৌপথ। সেই পথেও প্রতিবার নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয় বা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়; কিন্তু ভোগান্তি লাঘব হয় না।
রাজধানী থেকে নৌপথে চলাচলকারীদের বিড়ম্বনার শুরু সদরঘাটে। ঈদের সময় সেখানে বাড়ে দালালচক্র, টিকিট কালোবাজারিচক্র ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ওই ঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল করে। পুরনো লঞ্চ-স্টিমার রং করে চালু করা হয়। নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়া, তোলা হয় অতিরিক্ত যাত্রী। নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা সড়ক ও রেলপথের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার সড়কপথের অনেক স্থানে সংযোজক হিসেবে থাকে নৌপথ। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী। সড়কের ভোগান্তি তো রয়েছেই, সঙ্গে এই দুই রুটের ঘাটে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় ঘাটে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, ফেরি পারাপারেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। অপরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই এসব সমস্যা দেখা দেয়। ঈদ যাত্রা আনন্দ যাত্রা হলেও শেষ পর্যন্ত অনেকেরই তা থাকে না। দীর্ঘমেয়াদি ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেই বলে, ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু নয় বলে, পরিবহন মালিকদের সেবা দেওয়ার চেয়ে আয়ের চিন্তা বেশি থাকে বলে ঈদ যাত্রা অশেষ ভোগান্তির যাত্রায় পরিণত হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের টিকিট কালোবাজারি ও দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে পকেট ভরার দিকে নজর বেশি থাকে। দালালদের উৎপাতও বাড়ে। যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়-চেষ্টা থাকলে সত্যি আনন্দময় আবহ তৈরি হতে পারে ঈদের সময়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগেভাগেই এ ব্যাপারে সচেতন ও তৎপর হলে ভালো হয়।
Leave a Reply